অ্যা নাইট টু রিমেম্বার’ ও ‘অ্যান অ্যাফেয়ার টু রিমেম্বার’—দুটোই হলিউডের সিনেমা। এমিরেটস স্টেডিয়ামে গতকালের রাতটি দেখে দুটো সিনেমার নাম বারবার মনে পড়তে পারে। আর্সেনাল–ভক্তদের জন্য হিরণ্ময় এক রাত, স্মরণীয় ডেকলান রাইসের জন্যও; এই রাতেই তো ফ্রি–কিকের সঙ্গে তাঁর হঠাৎ পরিণয়!
কিলিয়ান এমবাপ্পের অবস্থা তখন বাংলা সিনেমার নায়ক বাপ্পারাজের মতো। ক্যারিয়ারে পাঁচ শর বেশি ম্যাচ খেলে এমবাপ্পে যে পরিণয়ের দেখা পাননি এখনো, রাইস এক রাতেই তার দেখা পেলেন কিনা দুবার!
রোমান্টিক বিরহের সিনেমায় বাপ্পারাজের সামনে দিয়ে যেমন তাঁর প্রেমিকাকে অন্য নায়ক নিয়ে চলে যায়, রাইস দ্বিতীয় গোল করার পর এমবাপ্পের চোখমুখের অবস্থাও হয়েছিল তেমনই। মুখটা একবার ঝাঁকিয়ে চোখের চাহনিতে ফুটেছে বাস্তবতা মেনে নেওয়ার স্বীকৃতি। এমবাপ্পে মমতাজ শোনেননি, শুনলে নিশ্চয়ই তখন তাঁর বুকে বাজত, ‘বন্ধু যখন “ফ্রি–কিক” লইয়া আমার বাড়ির রাস্তা দিয়া…।’
কিন্তু এমিরেটস স্টেডিয়াম—এমবাপ্পের কিংবা রিয়ালের ঘর নয়, আর্সেনালের। রাইসও এমবাপ্পের বন্ধু নন, শত্রুও নন। তবু তাঁর মুখে অমন বিরহদহনসূচক রেখাচিত্র জাগার কারণ সরাসরি ফ্রি–কিক থেকে রাইসের দুটি গোল।
শুধু গোল বললে অবশ্য দুটি শটের পুরো মাধুর্য বোঝানো যায় না। আন্তমহাদেশীয় ‘গাইডেড’ মিসাইল তীব্রগতিতে রংধনুর বাঁক নিয়ে লক্ষ্যে আঘাত হানলে দেখতে যেমন লাগে, রাইসের শট দুটিও তেমন। গ্যালারিতে রবার্তো কার্লোসকেও দেখা গেল। রাইসের প্রথম গোলটির পর ক্যামেরায় একবার তাঁকে দেখানো হলো। তারপর কি আসন ছেড়ে উঠে গিয়েছিলেন? সেটা হলেই তাঁর জন্য ভালো। রাইসের দ্বিতীয় গোলটি দেখলে যে ফ্রি–কিক কিংবদন্তির বুকের ব্যথাটাই শুধু বাড়ত।
যেমনটা বেড়েছে এমবাপ্পের। রাইসের মতো অপেক্ষায় ছিলেন তিনিও। রাইস পেয়ে গেলেন, এমবাপ্পে এখনো জানেন না কবে পাবেন। কী? সরাসরি ফ্রি–কিক থেকে গোল। পেশাদার ক্যারিয়ারে ৩৩৮টি ম্যাচ খেলার পর কেউ যখন এক রাতেই ফ্রি–কিক থেকে সরাসরি দুটি গোল পেয়ে যান, তখন বুকে ব্যথা নিয়ে তাঁকে হিংসা করা ছাড়া উপায় কী! রাইসকে নিয়ে এমবাপ্পের মনেও কি তেমনই…?
জানা যায়নি। তবে ১২ মিনিটের মধ্যে জোড়া ‘বজ্রপাতে’ রিয়ালকে পুড়িয়ে ফেলা রাইসের মনের খবর জানা গেছে। রিয়ালকে ৩-০ গোলে হারানোর পর আমাজন প্রাইমকে বলেছেন, ‘আমি জানি না এই ঘোর কাটবে কি না। ফ্রি–কিক থেকে প্রথম গোল করা ম্যাচটি এমনিতেই বিশেষ কিছু। দ্বিতীয়টি যখন পেলাম…আত্মবিশ্বাস ছিল। সত্যি বলতে, আমি ভাষাহীন। এটা ঐতিহাসিক রাত।’
ইতিহাসের পাতা পরে ওলটানো যাবে। আগে ফ্রি–কিক দুটি মনে করা যাক। ৫৮ মিনিট। প্রায় ৩০ গজ দূরে ফ্রি–কিক পেল আর্সেনাল। সাধারণত মার্টিন ওডেগার্ড কিংবা বুকায়ো সাকা আর্সেনালের হয়ে ফ্রি–কিক নিলেও রিয়ালের ‘মানবদেয়াল’–এর পাশ দিয়ে ফাঁকা জায়গা দেখে আত্মবিশ্বাস জেগে ওঠে রাইসের। সাকাকে ব্যাপারটি বলার পর আর্সেনাল উইঙ্গারের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাইস নিজেই, ‘যদি তোমার মনে হয় (পারবে), নিয়ে নাও—আমার মনে হয় এটা করায় সে খুশিই হয়েছে।